আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় কত সালে

ভাষা হলো একটি জাতির পরিচয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভাষা মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এবং সংস্কৃতির বাহক। পৃথিবীর প্রতিটি জাতির নিজস্ব মাতৃভাষা রয়েছে, যা তাদের ঐতিহ্য ও সভ্যতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই ভাষাগত বৈচিত্র্য ও মাতৃভাষার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কিন্তু এই দিবসের যাত্রা শুরু হয়েছিল এক বিশেষ ঘটনার মাধ্যমে, যা আমাদের বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রথম পালিত হয় ২০০০ সালে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর, ইউনেস্কো (UNESCO) ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।

কেন ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে নির্বাচিত হলো?

২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো হয়, যার ফলে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকেই শহীদ হন। এই রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষা তার স্বীকৃতি অর্জন করে এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিতেই ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এই দিবসটি এখন বিশ্বব্যাপী ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব

১. ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ: বিশ্বে প্রায় ৭,০০০ ভাষা প্রচলিত রয়েছে, তবে এর মধ্যে অনেক ভাষা বিলুপ্তির পথে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই ভাষাগুলোর সংরক্ষণ ও প্রচারের গুরুত্ব তুলে ধরে।

  1. সংস্কৃতির বিকাশ: ভাষার সঙ্গে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই দিবসটি বিভিন্ন জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং প্রসারের ওপর গুরুত্ব দেয়।
  2. শিক্ষা ও যোগাযোগের উন্নতি: মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করলে শিখন প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং শিক্ষার মানোন্নতি ঘটে। এই দিবসটি মাতৃভাষায় শিক্ষার গুরুত্বকে জোরদার করে।
  3. ভাষিক অধিকার রক্ষা: অনেক দেশে ভাষাগত সংখ্যালঘুদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই অধিকার রক্ষার পক্ষে কাজ করে।

বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

এই দিবসটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে পালিত হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভাষা সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। স্কুল-কলেজে ভাষা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশে এই দিবসটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন। এছাড়া বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বাংলাদেশি কমিউনিটি তাদের নিজ নিজ দেশে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে।

প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় ২০০০ সালে, যা বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের ফসল। এটি শুধুমাত্র একটি দিবস নয়, বরং ভাষার প্রতি ভালোবাসা, অধিকার রক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতীক। মাতৃভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য এবং এর সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের এই দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেয় এবং বিশ্বব্যাপী ভাষার বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য অনুপ্রাণিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button