আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা ২০২৫

প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষার অধিকার রক্ষার আন্দোলনে বাংলার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০২৫ সালেও এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভাষার বৈচিত্র্য ও সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এক অনন্য অধ্যায়। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর পুলিশ গুলি চালায়, শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার ও আরও অনেকে। তাদের আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ ১৯৫৬ সালে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে, যা ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।
২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য
প্রতিবছর ইউনেস্কো মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও ভাষাগত বৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরতে বিশেষ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য বিষয়বস্তু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি, তবে পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো এবারও ভাষার বহুমাত্রিকতা, সংরক্ষণ, ও ডিজিটাল যুগে ভাষার টিকে থাকার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করা হতে পারে।
বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপন
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালিত হয়। জাতীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, প্রভাতফেরি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করা হয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
এছাড়াও, বইমেলা, সাহিত্য আলোচনা এবং বিশেষ প্রকাশনা এই দিনটিকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। গণমাধ্যমেও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়।
বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
বাংলাদেশের বাইরে অন্যান্য দেশেও এই দিনটি ভাষা সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে উদযাপিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংস্কৃতিকেন্দ্রগুলো মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে সেমিনার, কর্মশালা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এছাড়া জাতিসংঘ, ইউনেস্কো এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ভাষার বৈচিত্র্য ও সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ কর্মসূচি পরিচালনা করে।
ডিজিটাল যুগে মাতৃভাষার গুরুত্ব
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে মাতৃভাষার প্রচার ও সংরক্ষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানত ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য থাকায় অনেক ছোট ভাষা হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মাতৃভাষার ব্যবহার বাড়াতে অনলাইন কনটেন্ট তৈরি, ভাষা শিক্ষা অ্যাপ এবং স্থানীয় ভাষায় তথ্য সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
মাতৃভাষার সংরক্ষণে করণীয়
- শিক্ষা ব্যবস্থায় মাতৃভাষার গুরুত্ব বাড়ানো: প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চশিক্ষায় মাতৃভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।
- সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ: স্থানীয় সাহিত্য, গান, নাটক, চলচ্চিত্র ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মাতৃভাষার প্রচার বাড়াতে হবে।
- প্রযুক্তিতে মাতৃভাষার ব্যবহার: অনলাইন কনটেন্ট, মোবাইল অ্যাপ, ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাতৃভাষার উপস্থিতি বাড়ানো উচিত।
- পারিবারিক পরিবেশে ভাষার চর্চা: পরিবারের মধ্যে মাতৃভাষায় কথা বলা এবং সন্তানদের মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করা দরকার।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শুধু একটি দিবস নয়, এটি ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের একটি অনন্য উপলক্ষ। ২০২৫ সালে আমরা আবারও আমাদের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাব এবং বিশ্বব্যাপী ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষার অঙ্গীকার করব। ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও সংরক্ষণের এই যাত্রায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পারে।