আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

প্রথম বছরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কতটি দেশে পালিত হয়

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিটি ভাষাপ্রেমী মানুষের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের স্মরণে পালিত হয় না, বরং এটি বিশ্বব্যাপী ভাষাগত বৈচিত্র্য ও বহুভাষিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে। তবে প্রথমবার যখন এই দিনটি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয়, তখন কতটি দেশ এতে অংশ নিয়েছিল? এ বিষয়টি অনেকেরই অজানা। আজকের এই ব্লগপোস্টে আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি

বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে জীবন উৎসর্গ করেন। এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্বব্যাপী এই দিনটি উদযাপন শুরু হয়।

প্রথমবারের উদযাপন: কতটি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল?

২০০০ সালে যখন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়, তখন এটি কতটি দেশে পালিত হয়েছিল তা নির্দিষ্টভাবে নথিভুক্ত নেই। তবে ইউনেস্কো এবং বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, অন্তত ২৮টি দেশ এই দিবসটি উদযাপন করে।

প্রথমবারের উদযাপনে প্রধানত বাংলাদেশ, ভারত, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলসহ অন্যান্য কিছু দেশ অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন দেশে এটি বিভিন্নভাবে পালিত হয়েছিল— কোথাও ভাষা বিষয়ক সেমিনার, কোথাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবার কোথাও র‍্যালি ও আলোচনা সভার মাধ্যমে।

বাংলাদেশের ভূমিকা

বাংলাদেশ সরকার এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০০০ সালের প্রথম উদযাপনের সময় বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো বিভিন্ন দেশে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে।

প্রথম বছরের প্রতিক্রিয়া

প্রথমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের পর, বিভিন্ন দেশ থেকে ইতিবাচক সাড়া আসে। ভাষা সংরক্ষণ ও মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। ইউনেস্কোর তৎকালীন মহাপরিচালক কোইচিরো মাতসুরা বলেছিলেন, “এই দিনটি বিশ্বের প্রতিটি ভাষার মর্যাদা ও সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি বহন করে।” বিভিন্ন ভাষাবিদ ও গবেষকরাও এই দিবসের গুরুত্ব সম্পর্কে ইতিবাচক মতামত দেন।

ক্রমবর্ধমান উদযাপন ও স্বীকৃতি

২০০০ সালে প্রাথমিকভাবে ২৮টি দেশে উদযাপিত হলেও, পরবর্তী বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব আরও বাড়তে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই কোনো না কোনোভাবে এই দিনটি পালন করা হয়। জাতিসংঘ, ইউনেস্কো এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ভাষাগত বৈচিত্র্য ও মাতৃভাষার সংরক্ষণে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে।

প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে ২৮টি দেশে পালিত হলেও, বর্তমানে এটি একটি সর্বজনীন দিবসে পরিণত হয়েছে। ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও মাতৃভাষার গুরুত্ব বোঝাতে এই দিনটি বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের শুধু ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করায় না, বরং এটি বিশ্বব্যাপী ভাষার সংরক্ষণ এবং বহুভাষিক শিক্ষার গুরুত্বও তুলে ধরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button