আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্ট্যাটাস ২০২৫

প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এটি ভাষার প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়। ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও ব্যতিক্রম নয়, বরং এটি আরও গভীরভাবে মাতৃভাষার গুরুত্বকে তুলে ধরবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সূচনা বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলনে নামেন। এদিন পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও আরও অনেকে। তাঁদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিম
প্রতি বছর ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্য একটি বিশেষ থিম নির্ধারণ করে। ২০২৫ সালের থিম হতে পারে ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ডিজিটাল শিক্ষার মাধ্যমে মাতৃভাষার প্রচার, অথবা বহুভাষিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে।
মাতৃভাষার গুরুত্ব
১. পরিচয়ের ভিত্তি: মাতৃভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
২. শিক্ষার মাধ্যম: মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করলে শিখতে সহজ হয় এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটে।
৩. সৃজনশীলতা বৃদ্ধি: মাতৃভাষায় মানুষ তার চিন্তাভাবনা সহজে প্রকাশ করতে পারে, যা সৃজনশীলতা বাড়ায়।
৪. সামাজিক সংহতি: ভাষা সমাজে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদযাপন
বাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। দিবসের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এদিন সর্বস্তরের মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করে, প্রভাতফেরিতে অংশ নেয় এবং ভাষা শহীদদের স্মরণে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি বইমেলা ও চিত্রপ্রদর্শনীর মাধ্যমে মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন
শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়। ইউনেস্কো, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও প্রচারের লক্ষ্যে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করে। বিভিন্ন দেশে ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য কনফারেন্স, ওয়ার্কশপ ও আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়।
কীভাবে মাতৃভাষাকে রক্ষা করা যায়?
১. প্রাথমিক শিক্ষায় মাতৃভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা
২. ডিজিটাল মাধ্যমে মাতৃভাষার প্রসার ঘটানো
৩. মাতৃভাষার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সংরক্ষণ করা
৪. নতুন প্রজন্মকে মাতৃভাষায় কথা বলতে ও লিখতে উৎসাহিত করা
৫. বহুভাষিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শুধু একটি দিন নয়, এটি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রতীক। ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেবে ভাষার গুরুত্ব ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব। মাতৃভাষাকে রক্ষা করা আমাদের সকলের কর্তব্য, যাতে আগামী প্রজন্ম তাদের ভাষার ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারে। আসুন, আমরা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং একে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেই।