বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উদযাপন প্রতিবেদন

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ২১শে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে স্মরণ করা এবং মাতৃভাষার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। আমাদের বিদ্যালয়েও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জাগ্রত করা এবং মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করাই ছিল এই উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য।
প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের উদ্যোগে কয়েকদিন আগেই দিবসটি উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়, যাতে সবাই সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে। শহীদ মিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়, এবং বিদ্যালয়ের প্রতিটি দেয়ালে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও শহীদদের স্মরণে নানা পোস্টার টাঙানো হয়।
প্রভাতফেরি ও শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি
২১শে ফেব্রুয়ারির সকালে বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরি অনুষ্ঠিত হয়। সবাই কণ্ঠে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো” গান গেয়ে শহীদ মিনারের দিকে অগ্রসর হয়। বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে পৌঁছে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়, এরপর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকমণ্ডলী ও শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও ভাষা আন্দোলন গবেষক। তিনি ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা এবং বর্তমান সময়ে মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও বক্তব্য প্রদান করেন এবং শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার গুরুত্ব বোঝার আহ্বান জানান।
এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কবিতা আবৃত্তি, নাটক, দেশাত্মবোধক গান ও নৃত্য পরিবেশন করে। বিশেষ আকর্ষণ ছিল ভাষা আন্দোলন বিষয়ক একটি নাটক, যেখানে শিক্ষার্থীরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলে। অনুষ্ঠানটি দর্শকদের মুগ্ধ করে এবং তাদের হৃদয়ে ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ছোটদের জন্য “আমার মাতৃভাষা” বিষয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বড়দের জন্য “ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব” শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ীদের জন্য আকর্ষণীয় পুরস্কারের ব্যবস্থাও করা হয়। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে উজ্জীবিত করার জন্য এই প্রতিযোগিতাগুলো অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
বইমেলা ও প্রদর্শনী
বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ভাষা আন্দোলন ও বাংলা সাহিত্য বিষয়ক একটি ক্ষুদ্র বইমেলারও আয়োজন করা হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষার মহান লেখকদের বই সম্পর্কে জানতে পারে এবং বই কেনার সুযোগ পায়। পাশাপাশি, একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীও ছিল, যেখানে ভাষা আন্দোলনের দুর্লভ কিছু ছবি ও তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উদযাপন আমাদের বিদ্যালয়ে একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা ছিল। এই দিনটি আমাদের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধকে আরও গভীর করেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ ও মাতৃভাষা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে এই উদযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকুক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।